Tuesday 22 September 2015

দান-ছাদকা গুনাহ মিটিয়ে ফেলে যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে ফেলে

Assalamu alaikum wa rahmatullah wa barakatuho. ...
“দান-ছাদকা গুনাহ মিটিয়ে ফেলে যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে ফেলে।” (সহীহুল জামে/৫১৩৬)
ধন-সম্পদের প্রকৃত মালিক আল্লাহ তা’আলা। তিনি যাকে ইচ্ছা উহা প্রদান করে থাকেন। এজন্য এ সম্পদ অর্জন ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে তাঁর বিধি-নিষেধ মেনে চলা আবশ্যক। সৎ পন্থায় সম্পদ উপার্জন ও সৎ পথে উহা ব্যয় করা হলেই তার হিসাব প্রদান করা সহজ হবে। কিয়ামতের দিন যে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কোন মানুষ সামনে যেতে পারবে না, তম্মধ্যে দু’টি প্রশ্নই ধন-সম্পদ বিষয়ক। প্রশ্ন করা হবে, কোন পথে সম্পদ উপার্জন করেছ এবং কোন পথে উহা ব্যয় করেছ।
সন্দেহ নেই ধন-সম্পদ নিজের আরাম-আয়েশ এবং পরিবারের ভরণ-পোষণের ক্ষেত্রে ব্যয় করার অনুমতি ইসলামে আছে এবং অনাগত সন্তানদের জন্য সঞ্চিত করে রাখাও পাপের কিছু নয়। কিন্তু পাপ ও অন্যায় হচ্ছে, সম্পদে গরীব-দুঃখীর হক আদায় না করা। অভাবী মানুষের দুঃখ দূর করার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করা। অথচ আল্লাহ বলেন:
وَالَّذِينَ فِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَعْلُومٌ، لِلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ
“এবং তাদের সম্পদে নির্দিষ্ট হক রয়েছে। ভিক্ষুক এবং বঞ্চিত (অভাবী অথচ লজ্জায় কারো কাছে হাত পাতে না) সকলের হক রয়েছে।” (মাআরেজ- ২৪-২৫)
অধিকাংশ মানুষ দান-খয়রাত করতে চায় না। মনে করে এতে সম্পদ কমে যাবে। তাই সম্পদ সঞ্চিত করে রাখতেই সর্বদা সচেষ্ট থাকে, এমনকি নিজের প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রেও খরচ করতে কৃপণতা করে।
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“মানুষ বলে আমার সম্পদ আমার সম্পদ অথচ তিনটি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সম্পদই শুধু তার। যা খেয়ে শেষ করেছে, যা পরিধান করে নষ্ট করেছে এবং যা দান করে জমা করেছে- তাই শুধু তার। আর অবশিষ্ট সম্পদ সে ছেড়ে যাবে, মানুষ তা নিয়ে যাবে।” (মুসলিম)
দান-ছাদকা করার ফযীলত
দান-ছাদকা করলে সম্পদ কমে না:
আবু কাবশা আল আনমারী (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি শুনেছেন রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
” مَا نَقَصَ مَالُ عَبْدٍ مِنْ صَدَقَةٍ
“ছাদকা করলে কোন মানুষের সম্পদ কমে না।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)
ক) দান সম্পদকে বৃদ্ধি করে:
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন:
مَثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
“যারা আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয় করে তার উদাহরণ হচ্ছে সেই বীজের মত যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। আর প্রতিটি শীষে একশতটি করে দানা থাকে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অতিরিক্ত দান করেন। আল্লাহ সুপ্রশস্ত সুবিজ্ঞ।” (সূরা বাকারা-২৬১)
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
مَنْ أَنْفَقَ نَفَقَةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَانَتْ لَهُ بِسَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ
“যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে কোন কিছু ব্যয় করবে তাকে সাতশত গুণ ছওয়াব প্রদান করা হবে।” (আহমাদ, সনদ ছহীহ)
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেন:
“যে ব্যক্তি নিজের হালাল কামাই থেকে- আল্লাহ হালাল কামাই ছাড়া দান কবুল করেন না- একটি খেজুর ছাদকা করে, আল্লাহ উহা ডান হাতে কবুল করেন অতঃপর তা বৃদ্ধি করতে থাকেন- যেমন তোমরা ঘোড়ার বাচ্চাকে প্রতিপালন করে থাক- এমনকি উহা একটি পাহাড় পরিমাণ হয়ে যায়।” (বুখারী ও মুসলিম)
খ) দানকারীর জন্য ফেরেশতা দু’আ করে:
আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাদের একজন দানকারীর জন্য দু’আ করে বল,
اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا
“হে আল্লাহ দানকারীর মালে বিনিময় দান কর। (বিনিময় সম্পদ বৃদ্ধি কর)”
আর দ্বিতীয়জন কৃপণের জন্য বদ দু’আ করে বলেন,
اللَّهُمَّ أَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا
“হে আল্লাহ কৃপণের মালে ধ্বংস দাও।” (বুখারী ও মুসলিম)
গ) দানকারীর দুনিয়া আখিরাতের সকল বিষয় সহজ করে দেয়া হয়:
আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
مَنْ يَسَّرَ عَلَى مُعْسِرٍ يَسَّرَ اللَّهُ عَلَيْهِ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ
”যে ব্যক্তি কোন অভাব গ্রস্তের অভাব দূর করবে, আল্লাহ তার দু’নিয়া ও আখিরাতের সকল বিষয় সহজ করে দিবেন।” (মুসলিম)
ঙ) গোপনে দান করার ফযীলতঃ
গোপন-প্রকাশ্যে যে কোনভাবে দান করা যায়। সকল দানেই ছওয়াব রয়েছে। আল্লাহ বলেন:
إِنْ تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَ وَإِنْ تُخْفُوهَا وَتُؤْتُوهَا الْفُقَرَاءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَيُكَفِّرُ عَنْكُمْ مِنْ سَيِّئَاتِكُمْ
”যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-খয়রাত কর, তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি গোপনে ফকীর-মিসকিনকে দান করে দাও, তবে এটা বেশী উত্তম। আর তিনি তোমাদের পাপ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন।” (সূরা বকারা- ২৭১)
চ) গোপনে দানকারী কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের নীচে ছায়া লাভ করবে:
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
“কিয়ামত দিবসে সাত শ্রেণীর মানুষ আরশের নীচে ছায়া লাভ করবে।… তম্মধ্যে এক শ্রেণী হচ্ছে:
وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ
“এক ব্যক্তি এত গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত কি দান করে বাম হাত জানতেই পারে না।” (বুখারী ও মুসলিম)
ছ) দান-ছাদকা গুনাহ মাফ করে ও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচায়:
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“হে কা‘ব বিন উজরা! ছালাত (আল্লাহর) নৈকট্য দানকারী, ছিয়াম ঢাল স্বরূপ এবং দান-ছাদকা গুনাহ মিটিয়ে ফেলে যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে ফেলে।” (আবু ইয়ালা, সনদ ছহীহ)
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ
“খেজুরের একটি অংশ দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা কর।” (বুখারী ও মুসলিম)
জ) মানুষ কিয়ামতে দান-ছাদকার ছায়াতলে থাকবে:
উক্ববা বিন আমের (রা:) থেকে বর্ণিত। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
“নিশ্চয় দান-ছাদকা দানকারী থেকে কবরের গরম নিভিয়ে দিবে। আর মু’মিন কিয়ামত দিবসে নিজের ছাদকার ছায়াতলে অবস্থান করবে।” (ত্ববরানী, বাইহাক্বী, সনদ ছহীহ)
লোক দেখানোর জন্য দান
কিন্তু বর্তমান যুগে অনেক মানুষ এমন আছে, যারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে দান করে এবং তা মানুষকে দেখানোর জন্য। মানুষের ভালবাসা নেয়ার জন্য। মানুষের প্রশংসা কুড়ানোর জন্য। মানুষের মাঝে গর্ব অহংকার প্রকাশ করার জন্য। অনেকে দুনিয়াবি স্বার্থ সিদ্ধির জন্যও দান করে থাকে। যেমন, চেয়ারম্যান বা এমপি নির্বাচনে জেতার উদ্দেশ্য দান করে। কিন্তু দান যদি একনিষ্ঠ ভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য না হয় তা দ্বারা হয়ত দুনিয়াবি কিছু স্বার্থ হাসিল হতে পারে কিন্তু আখেরাতে তার কোন প্রতিদান পাওয়া যাবে না।
হাদীছে কুদসীতে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন আল্লাহ বলেন:
أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ مَنْ عَمِلَ عَمَلًا أَشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ “
“আমি শির্ক কারীদের শিরক থেকে মুক্ত। যে ব্যক্তি কোন আমল করে তাতে আমার সাথে অন্যকে শরীক করবে, তাকে এবং তার শির্কী আমলকে আমি পরিত্যাগ করব।” (মুসলিম)
বরং যারা মানুষের প্রশংসা নেয়ার উদ্দেশ্যে দান করবে, তাদের দ্বারাই জাহান্নামের আগুনকে সর্বপ্রথম প্রজ্বলিত করা হবে।
রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
“সর্বপ্রথম তিন ব্যক্তিকে দিয়ে জাহান্নামের আগুনকে প্রজ্বলিত করা হবে।… তম্মধ্যে (সর্ব প্রথম বিচার করা হবে) সেই ব্যক্তির, আল্লাহ যাকে প্রশস্ততা দান করেছিলেন, দান করেছিলেন বিভিন্ন ধরনের অর্থ-সম্পদ। তাকে সম্মুখে নিয়ে আসা হবে। অতঃপর (আল্লাহ) তাকে প্রদত্ত নেয়ামত রাজীর পরিচয় করাবেন। সে উহা চিনতে পারবে। তখন তিনি প্রশ্ন করবেন, কি কাজ করেছ এই নেয়ামত সমূহ দ্বারা? সে জবাব দিবে, যে পথে অর্থ ব্যয় করলে আপনি খুশি হবেন এ ধরনের সকল পথে আপনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে অর্থ-সম্পদ ব্যয় করেছি। তিনি বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি এরূপ করেছ এই উদ্দেশ্যে যে, তোমাকে বলা হবে, সে দানবীর। আর তা তো বলাই হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে। তখন তাকে মুখের উপর উপুড় করে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।” (মুসলিম)
আত্মীয়-স্বজনকে দান করা
সালমান বিন আমের (রা:) থেকে বর্ণিত, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
“মিসকিনকে দান করলে তা শুধু একটি দান হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু গরীব নিকটাত্মীয়কে দান করলে তাতে দ্বিগুণ ছওয়াব হয়। একটি ছাদকার; অন্যটি আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার।” (নাসাঈ, তিরমিযী)
দান-ছাদকা করে খোঁটা দেয়া
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُمْ بِالْمَنِّ وَالْأَذَى
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা খোঁটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-খায়রাতকে বরবাদ করে দিও না।” (সূরা বকারা- ২৬৪)
আবু যর (রা:) থেকে বর্ণিত, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“কিয়ামত দিবসে আল্লাহ পাক তিন ব্যক্তির সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণা দায়ক শাস্তি। কথাটি তিনি তিনবার বললেন। আবু যার (রা:) বললেন, ওরা ধ্বংস হোক ক্ষতিগ্রস্ত হোক- কারা তারা হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, “টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে যে কাপড় পরিধান করে, দান করে যে খোঁটা দেয় এবং মিথ্যা শপথ করে যে ব্যবসায়ী পণ্য বিক্রয় করে।” (মুসলিম)
কৃপণের পরিণতি
কৃপণতা একটি নিকৃষ্ট বিষয়। কৃপণতা থেকে মনের মাঝে হিংসা সৃষ্টি হয়। এ কারণে মানুষ লোভী হয়। ফলে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং সম্পদের লোভে যে কোন ধরণের অন্যায় ও অবৈধ কাজে পা বাড়ায়। এজন্য নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবিষয়ে উম্মতকে সতর্ক করেছেন।
তিনি বলেছেন:
“তোমরা কৃপণতা ও লোভ থেকে সাবধান। কেননা পূর্ব যুগে এই কারণে মানুষ রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, মানুষকে খুন করেছে এবং নানা প্রকার পাপাচার ও হারাম কাজে লিপ্ত হয়েছে।” (আবু দাউদ, হাকেম) এজন্য নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কৃপণতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। তিনি দু’আয় বলতেন, “হে আল্লাহ তোমার কাছে কৃপণতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।..” (মুসলিম)
লেখক: মুহাঃ আবদুল্লাহ আল কাফী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনা : আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
দাঈ, জুবাইল দাওয়া এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সঊদী আরব।

দাড়ি লম্বা করা : দাড়ি রাখার উপকারিতা


ফোতওয়াঃ দাড়ি লম্বা করা
ক্বিতাবঃ সহীহ ফিক্বহুস সুন্নাহ
ফকিহঃ আবূ মালিক কামাল বিন আস-সাইয়্যিদ সালিম
অধ্যায়ঃ স্বভাবজাত (ফিতরাত) সুন্নাতসমূহ
.
দাড়ি লম্বা করার হুকুম:
.
পুরুষের জন্য দাড়ি লম্বা করা ওয়াজিব। এর কারণ নিম্নরূপ:
.
১। মহানাবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ﷺ) দাড়ি লম্বা করার নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশটা ওয়াজিব অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। মানদূব (যা আমল করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে আর পরিত্যাগ করলে শাস্তি হবে না) অর্থে ব্যবহৃত হওয়ার কোন ইঙ্গিত এখানে নেই।
.
এ ব্যাপারে মহানাবী (ﷺ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম )এর বাণী হলো:
.
ﺧﺎﻟﻔﻮﺍ ﺍﻟﻤﺸﺮﻛﻴﻦ : ﻭﻓﺮﻭﺍ ﺍﻟﻠﺤﻰ ﻭﺃﺣﻔﻮﺍ ﺍﻟﺸﻮﺍﺭﺏ
.
(দাড়ি ও গোফের ব্যাপারে) তোমরা মুশরিকদের বিপরীত কর। দাড়ি লম্বা কর এবং গোঁফ ছোট কর।[ সহীহ; বুখারী ৫৮৯২, মুসলিম ২৫৯ ]
.
তিনি আরও বলেন:
.
ﺟﺰﻭﺍ ﺍﻟﺸﻮﺍﺭﺏ ﻭﺃﺭﺧﻮﺍ ﺍﻟﻠﺤﻰ ﺧﺎﻟﻔﻮﺍ ﺍﻟﻤﺠﻮﺱ
.
‘তোমরা গোঁফ কাট এবং দাড়ি লম্বা কর আর অগ্নি পুজকদের বিরোধিতা কর ’।[ সহীহ; মুসলিম (২৬০)]
.
২। দাড়ি মুণ্ডন করা কাফিরদের সাথে সাদৃশ্য রাখে। যেমনটি পূর্বোলেস্নখিত হাদীসদ্বয়ে বর্ণিত হয়েছে।
.
৩। দাড়ি কর্তন করলে আল্লাহ্র সৃষ্টির পরিবর্তন করা হয় এবং শয়তানের আনুগত্য করা হয়।
.
আল্লাহ্র বাণী:
.
﴿ ﻭَﻟَﺂﻣُﺮَﻧَّﻪُﻡْ ﻓَﻠَﻴُﻐَﻴِّﺮُﻥَّ ﺧَﻠْﻖَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﴾
.
অবশ্যই তাদেরকে আদেশ করব, ফলে অবশ্যই তারা আল্লাহ্র সৃষ্টি বিকৃত করবে (সূরা নিসা-১১৯)।
.
৪। দাড়ি মুণ্ডন করলে নারীদের সাদৃশ্য হয়ে যায়। যে সব পুরুষেরা নারীর সাদৃশ্য গ্রহণ করে; আল্লাহ্র রাসূল ( ﷺ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) তাদের প্রতি অভিশাপ করেছেন।[ বুখারী (৫৮৮৫), তিরমিযী (২৯৩৫)]
.
এজন্য শাইখুল ইসলাম বলেন: দাড়ি মুণ্ডন করা হারাম।[ ইখতিয়ারাতুল ফিকহিয়্যাহ (পৃ. ১০) আলাউদ্দীন আলবা’লী প্রণীত। আল-ফুরু’ (১/২৯১) ‘ইবনু মুফালিহ’ প্রণীত। ] ইবনে হাযম ও অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেন: দাড়ি মুণ্ডন করা হারাম, এ ব্যাপারে ইজমা রয়েছে।[ মারাতীবুল ইজম’, রাদ্দুল মুহতার-(২/১১৬)]
.
এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি ছাটা জায়েয আছে কি?
.
কতিপয় বিদ্বানের মতে: এক মুষ্টি দাড়ি রেখে বাকি অংশ কেটে ফেলা জায়েয আছে। তারা ইবনে উমার (রাঃ) এর হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করে থাকেন।
.
ﻛَﺎﻥَ ﺍﺑْﻦُ ﻋُﻤَﺮَ : « ﺇِﺫَﺍ ﺣَﺞَّ ﺃَﻭِ ﺍﻋْﺘَﻤَﺮَ ﻗَﺒَﺾَ ﻋَﻠَﻰ ﻟِﺤْﻴَﺘِﻪِ، ﻓَﻤَﺎ ﻓَﻀَﻞَ ﺃَﺧَﺬَﻩُ »
.
ইবনে উমার (রাঃ) যখন হাজ্জ ও উমরা করতেন তখন তার দাড়ি ধরে অতিরিক্ত অংশ ছেঁটে ফেলতেন।[ সহীহ; বুখারী (৫৮৯২), মুসলিম (২৫৯)]
.
তারা বলেন: তিনি (উমার) দাড়ি লম্বার নির্দেশ দেয়া হাদীসের রাবী। সুতরাং তিনিই তার বর্ণনা সম্পর্কে বেশি বুঝেন।
.
এই আসারের মাধ্যে তাদের কোন দলীল নেই।[ ইহা শাইখ আল-হাবীহ ওয়াহিদ আঃ সালাম তাঁর আল ইকলিল (১/৯৬) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন] কেননা-
(১) ইবনে উমার এটা হাজ্জ ও উমরা থেকে হালাল হওয়ার পর করেছিলেন। অথচ সেটাকে তারা সর্বাবস্থার জন্য বৈধ মনে করেন।
.
(২) ইবনে উমার (রাঃ) এ কাজটি আল্লাহ্র বাণী- ﻣُﺤَﻠِّﻘِﻴﻦَ ﺭُﺀُﻭﺳَﻜُﻢْ ﻭَﻣُﻘَﺼِّﺮِﻳﻦَ অর্থাৎ: তোমাদের মাথা মুণ্ডন করে এবং চুল ছেঁটে (নির্ভয়ে মাসজিদুল হারামে অবশ্যই প্রবেশ করবে) (সূরা : ফাতাহ-২৭)। এ আয়াতটির উপর তা‘বীল করে করেছেন। অর্থাৎ: হাজ্জের সময় মাথা মুণ্ডন করতে হবে, আর দাড়ি ছোট করতে হবে।[ দেখুন! ‘শারহুল কিরমানী আলাল বুখারী (২১/১১১)]
.
(৩) সাহাবাগণ যখন তাদের বর্ণনার বিপরীত কিছু বলেন বা করেন, তখন যা বর্ণনা করেছেন তাই গ্রহণ করতে হয়। তাদের বোধগম্যতা ও কর্ম ধর্তব্য নয়। বরং মহানাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দিকে সম্পৃক্ত বিষয়টিই ধর্তব্য।
.
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, বিশুদ্ধ মতামত হলো, দাড়ি ছেড়ে দেয়া ওয়াজিব। অনেক সহীহ হাদীসে দাড়ি লম্বা করার ব্যাপারে সাধারণভাবে নির্দেশ দেয়ার ফলে তা কাট-ছাট করা যাবে না। হাদীসে বিভিন্ন শব্দে এ নির্দেশগুলো বর্ণিত হয়েছে। যেমন: ﺃﻋﻔﻮﺍ তথা লম্বা হতে দাও, ﺃﺭﺧﻮﺍ তথা ছেড়ে দাও, ﺃﺭﺟﻮﺍ তথা অবকাশ দাও, ﻭﻓﺮﻭﺍ তথা পূর্ণ বা বেশি হতে দাও, ﺃﻭﻓﻮﺍ সম্পূর্ণ কর। অধিকাংশ বিদ্বানগণ এ মতামত পোষণ করেছেন। আল্লাহ্ই সর্বাধিক অবগত।
add more- https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=651805541629560&id=562508907225891&substory_index=0

--------------------------------------------------------------------------------------
Tafazzal Hussain
1 hr ·
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্
• রাসুল সাঃ আমার আদর্শ •
দাড়ি রাখার উপকারিতা***
১)দাড়ি রাখলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) খুশি হন।
২) দাড়ি রাখা দ্বারা সকল নবীগণের সাদৃশ্য গ্রহণ করা হয়।
৩)দাড়ি রাখলে নবীজির শাফায়াত লাভ হবে। ৪)দাড়ি রাখলে কবরের আযাব মাফ হবে। ৫)দাড়িওয়ালার প্রতি মানুষের ধারণা ভাল থাকে এবং সে মানুষের দোয়া পায়।
৬)অপরিচিত স্থানে দাড়িওয়ালা মুসলমান মারা গেলে,মুসলমান কিনা চেনার জন্য উলঙ্গকরে খাতনা দেখতে হয় না।
৭)দাড়িতে চেহারার সৌন্দর্য্য বাড়ে এবং এবং বীরত্বের পরিচয় বহন করে।
৮)কিয়ামতের অন্ধকারে মুমিনের দাড়ি নূরে পরিণত হবে।
৯)ঈমান-আমল ঠিক থাকলে দাড়িওয়ালা ব্যক্তি নবী ও ওলীর সাথে সাক্ষাৎ ও হাশর হবে। ১০)দাড়ি রাখলে অনেক পাপ থেকে বেঁচে থাকা যায়।
১১) দাড়ি ইসলামী সভ্যতার অন্যতম প্রতীক। ১২) দাড়ি রাখলে মুনকার-নাকীরের সুওয়াল-জাওয়াবসহজ হয়। ১৩)লম্বা দাড়ি স্বাস্থের ক্ষতিকর জীবানু গুলোকে গলা ও সিনাতে পৌঁছতে দেয় না।
১৪) দাড়ি গলাকে শীত ওগরমের বিরুপ প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত রাখে। ১৫)দাড়ির অস্তিত্ব যৌনশক্তিকে বৃদ্ধি করে,যা ডাক্তার দ্বারা প্রমাণিত। ১৬)দাড়ি রাখলে পাইরিয়ার মত মারাত্বক রোগথেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
১৭)দাড়ি রাখলে সেভ করার অনর্থক সময় ও অর্থ অপচয় থেকে বাঁচা যায়।
১৮)দাড়ি দ্বারা গুণাহে জারিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
১৯) দাড়ি রাখার দ্বারা শারীরিক সৌন্দর্য্যবৃদ্ধি পায়।
তাই দাড়ি রাখলে এই ক্ষতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। আল্লাহ আমাদের দাড়ি রাখার তৌফিক দান করুক। আমিন...

--------------------------------------------------------------------------

[fm sayeed been jamal-fb-
Sahih Al-Bukhari Hadith 9.651 Narrated by Abu Said Al Khudri
The Prophet said, "There will emerge from the East some people who will recite the Qur'an but it will not exceed their throats and who will go out of (renounce) the religion (Islam) as an arrow passes through the game, and they will never come back to it unless the arrow, comes back to the middle of the bow (by itself) (i.e., impossible). The people asked, "What will their signs be?" He said, "Their sign will be the habit of shaving (of their beards). http://www.islamhelpline.net/node/1625


Sunday 13 September 2015

দাঁড়ি না রাখার ভয়াবহ ক্ষতিসমূহ


"দাঁড়ি না রাখার ভয়াবহ ক্ষতিসমূহ"
.
.
★ দাঁড়ি না রাখলে শি'আরে ইসলাম তথা মুসলমানের জাতির নিদর্শন তরক করা হয় এবং এতে ফাসিক সাব্যস্ত হতে হয়।
★ অন্য গুনাহ একবার করলে একবার লেখা হয়, কিন্তু দাঁড়ি না রাখলে ২৪ ঘন্টাই দাঁড়ি না রাখার গুনাহ লিখা হতে থাকে।
★ সকল অভিজ্ঞ ডাক্তারদের অভিমত বার বার দাঁড়ি মুন্ডালে দৃষ্টিশক্তি ও যৌনশক্তি কমে যায়।
★ দাঁড়ি ঈমান ও ইসলামের বৈশিষ্ট্য, যদি তা বিলুপ্ত করা হয়,তখন সে ব্যক্তি মুমিন না কাফের- তা প্রায় সময় স্হির করা অসম্ভব হয়ে যায়।
★ দাঁড়ি সেভে অর্থের যেমন অপচয় হয়,তেমনি জীবনের মহা মূল্যবান সময়ও নষ্ট হয়।
★ বার বার দাঁড়ি সেভ করলে শীঘ্রই তা পেকে যাই,পরবর্তীতে দাঁড়ি রাখার ইচ্ছা করলেও তখন লজ্জায় আর রাখতে পারে না।
★ দাঁড়িবিহীন লোক প্রকৃত রুচি সম্মতা বউয়ের নিকট প্রচন্ড বিরক্তিকর ও অস্বস্তির কারন হিসেবে গন্য হয়।
★ দাঁড়ি না রাখলে বা ছোট করে ফেললে ইসলামী আইনে ইমাম ও মুয়াজ্জিন হওয়ার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে।
★ দাঁড়ি বার বার সেভ করার কারনে মুখের কমনীয়তা নষ্ট হয়ে যায়,এতে ঐ লোক অতি দ্রুত মুখের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ও মসৃনতা থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়।
★ দাঁড়ি কর্তনের খোদায়ী সৃষ্টির বিকৃতি সাধন করা হয়,যা পবিএ কুরআনে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। (উল্লেখ্য যে, মোচ,বগলের পশম ইত্যাদি কর্তন করা খোদায়ী সৃষ্টিকে বিকৃত করা নয় বরং এগুলো কর্তন করা মানুষের স্বভাবজাত কাজ ও শরীয়তের নির্দেশ)।
★ দাঁড়ি না রাখলে পুরুষের চেহারা মেয়েদের চেহারার সামজ্ঞস্য হয়ে যায়,অথচ হাদিস শরিফে নর-নারী উভয়কে একে অপরের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
★ দাঁড়ি ছাড়লে বা মুন্ডন করলে রাসূল (দ:) এর অন্তরে আঘাত দেয়া হয়, দাঁড়ি কাটার জন্য মুখে ব্লেড বা ক্ষুর লাগানোর অর্থই হল রাসূল (দ:) এর অন্তরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে দ্বিখন্ডিত করা (উল্লেখ্য যে,উম্মতের সকল আ'মলের সহিত এ আ'মলও প্রতি সপ্তাহে দুইবার রাসূল (দ:) এর নিকট পেশ করা হয়)।
★ দাঁড়িবিহীন লোক রাস্তাঘাটে অথবা অপরিচিত স্হানে মারা গেলে তার গোসল, কাফনও জানাযা নিয়ে মুসীবতে পড়তে হয়, কেননা তখন তাকে গোরস্হানে দাফন করা হবে, নাকি শ্বশানে নিয়ে যাওয়া হবে তা নির্ণয় করার জন্য কাপড় খুলে দেখা ছাড়া আর কোন উপায়ই থাকেনা। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাযত করুন (আমিন)
★ দাঁড়ি না রাখলে শরাফত ও বুযুর্গী নষ্ট হয়ে যায় এবং চেহারা থেকে ঈমানী নূর চলে যায়,এমন ব্যক্তি অন্য আ'মলের মাধ্যমে কখনোই আল্লাহর অলীর মর্যাদা লাভ করতে সক্ষম হয় না।
★ দাঁড়ি না রাখলে হাশরের ময়দানে শাফায়াত লাভ কিংবা হাউজে কাউসারের পানি পানের জন্য রাসূল (দ:) এর উম্মত বলে দাবী করাও মুশকিল হয়ে যাবে, আল্লাহ না করুক সে দিন হয়ত রাসূল (দ:) ঐ উম্মত থেকে গোস্বাভরে চেহারাও ফিরিয়ে নিতে পারেন, কারণ তার চেহারার সাথে রাসূল(দ:) এর চেহারার কোন মিল নেই।

***বি:দ্র:***
এ ব্যাপারে কারো মধ্যেই ভিন্ন মত নেই যে, দাঁড়ি কম পক্ষে এক মুষ্টি পরিমাণ লম্বা করে রাখা ওয়াজিব এবং উহা মুন্ডানো কিংবা এক মুষ্টির চেয়ে ছোট রাখা হারাম।
শাইখ বিন বায তার উমরার ফযিলাত প্রবন্ধে এ মতকে চুড়ান্ত করেছেন।
[সংকলিত]

kafir kuwar parinum


ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব অনুযায়ী ধারাবাহিকতা

●●প্রয়োজনীয় পোস্ট. আসুন পড়ে দেখি●●
দ্বীনের ইলম অর্জন ফরয, এটা আমরা সবাই জানি কিন্তু ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় আছে যা সবার আগে জানতে হয়, আবার কিছু বিষয় ধীরে ধীরে জেনে নিলেও হয়। আসুন এ বিষয়ের উপর রচিত এই গুরুত্বপূর্ণ লেখাটি পড়ে দেখি, জেনে নিই,
কোন বিষয়গুলো আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জেনে নিব>>
ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব অনুযায়ী ধারাবাহিকতা বজায় রাখা
________________________________________
এক ব্যক্তি আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারাক (রঃ) কে জিজ্ঞেস করলোঃ হে আবু আব্দুর রহমান, কোনটাকে আমি সারাদিনে বেশী প্রাধান্য দিবোঃ আল-কোরআন শিক্ষা না ইলম শিক্ষা? তিনি বললেনঃ তুমি কি এমন পরিমাণ আল-কোরআন শিখেছো যা দিয়ে তুমি সুন্দরভাবে সালাত কায়েম করতে পারো। সে বললোঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তাহলে তোমার জন্য ইলম। (ইবনে মুফলিহ রচিত “আল আদাব আশ শারীয়াহ” ২/৩৩-৩৪)
অর্থাৎ ইলম অর্জনের মধ্যেও গুরুত্বের কারণে আগে পরে শিক্ষা করার ব্যাপার আছে। সম্পূর্ণ আল-কোরআন শিক্ষা করা একটি নফল ইবাদাত কিন্তু দ্বীনের কোন কোন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। সালাত কায়েম করার পরিমাণ আল-কোরআন শিক্ষার পর অন্যান্য ইলম যেগুলি ফরজ সেগুলি শিক্ষা করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়।
ইবনে মুফলিফ “আল আদাব আশ শারীয়াহ” (২/৩৩-৩৪) গ্রন্থে আবু হারিস এর বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেনঃ ইমাম আহমাদ (রঃ) বলেছেনঃ “তার উপর আবশ্যকীয় হলো এমন জ্ঞান অর্জন করা যার উপর দ্বীন প্রতিষ্টিত এবং যা পরিত্যাগ করা (abandon) তার উচিত নয়”। আমি বললামঃ দ্বীন তো সকল জ্ঞানের উপর প্রতিষ্টিত। তিনি বললেনঃ “ফরজ যেগুলি তার উপর ব্যক্তিগতভাবে বাধ্যতামূলক এসব ব্যাপারে জ্ঞান অর্জনের ফরজ হবার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই”।
ইবনে রজব (রঃ) বলেছেনঃ
নিশ্চয়ই প্রত্যকে মুসলিমের উপর দ্বীনের ঐ সকল ব্যাপারে জ্ঞান অর্জন ফরজ – যেগুলি তার প্রয়োজন। যেমনঃ পবিত্রতা, সালাত, সিয়াম। আর যার সম্পদ আছে তার জন্য ঐ জ্ঞান অর্জন ফরজ যা ঐ সম্পদের কারণে তার উপর দায়িত্ব বর্তায় যেমনঃ যাকাত, সদকা, হাজ্জ্ব এবং জিহাদ। এ কারণে যারা বেচা-কেনা করেন, তাদের জন্য ক্রয়-বিক্রয়ে হালাল-হারাম শিক্ষা করা ফরজ। (দেখুনঃ মাজমু আর-রাসাইল, অধ্যায়ঃ ‘ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া, শারহু হাদিস আবি দারদা’, পৃঃ ২২-২৩)
অর্থাৎ ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে একটি ধারাবাহিকতা আছে। সবার আগে ঐ সব ব্যাপারে ইলম অর্জন করা ফরজ যা নিজে ফরজ। তারপর ঐ সব বিষয় আসবে যা নিজে সুন্নাহ ও মুস্তাহাব। আর সমস্ত ফরজের মধ্যে জীবনে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর বাস্তবায়ন তথা তাগুতকে অস্বীকার করা ও তাওহীদের বাস্তবায়ন, শিরক-কুফর পরিত্যাগ সবার আগে আসে। এসব বিষয় শিক্ষা করার আগে শারীয়াতের অন্যান্য সুন্নাহ ও মুস্তাহাব বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা – যথাযথ ধারাবাহিকতার পরিচায়ক নয় বরং অনেক বিপদের সম্ভাবনা আছে।
অন্যভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়ঃ বিচার দিবসে সমস্ত মানবজাতি মোট তিনটি ভাগে ভাগ হবে।
ক) অনেকে চির-জাহান্নামী হবে। যেমনঃ কাফির, মুশরিক, মুনাফিক ও মুর্তাদগণ।
খ) অনেকে সাময়িক সময়ের জন্য জাহান্নামে যাবে। যেমনঃ ফাসিক মুসলিমগণ যাদের তাওবা কবুল হয় নি কিংবা শাফায়াতও করা হয় নি কিংবা আল্লাহ নিজে থেকেও মাফ করে দেন নি।
গ) অনেকে আল্লাহর রহমতে সরাসরি জান্নাতে যাবে। কেউ কেউ জান্নাতের উচ্চস্তরে যাবে, কেউবা অপেক্ষাকৃত নিম্নস্তরে।
‘আগে মূলধন রক্ষা, পরে লাভ করার চেষ্টা’ - ইসলামের এই মূলনীতির আলোকে যদি আমরা চিন্তা করি, তাহলেঃ
ক) সবচেয়ে আগে আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে যাতে আমরা চির-জাহান্নামী না হই।
খ) তারপর চেষ্টা করতে হবে যাতে আমাদেরকে বিন্দুমাত্র সময়ের জন্যও জাহান্নামে না যেতে হয়।
গ) তারপর চেষ্টা করতে হবে যাতে জান্নাতের উচ্চতর স্তরে যাওয়া যায়।
ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের এই পর্যায়ক্রমিক ধারা মনে রাখা উচিত।
১) চিরস্থায়ী ভাবে জাহান্নামে যাওয়া থেকে বাঁচতে হলে, আমাদেরকে মুসলিম হতে হবে আর মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু বরণ করতে হবে।
এর জন্য যা যা নূন্যতম প্রয়োজন তা হলোঃ
(ক) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ’ এই সাক্ষ্য দেয়া – যা ইসলামের প্রথম স্তম্ভ। অর্থাৎ আমি সকল প্রকার মিথ্যা ইলাহ (তাগুত), মিথ্যা মাবুদ, ইবাদাতের মিথ্যা দাবীদার, অনুসরণের মিথ্যা দাবীদার, অনুকরণের মিথ্যা দাবীদারকে অস্বীকার করে, পরিত্যাগ করে, সেসব মিথ্যা ইলাহদের সাথে শত্রুতা পোষন করে, তাদেরকে ঘৃণাভরে পরিত্যাগ করছি। আর আল্লাহর সকল নাম ও গুনাবলী, তাঁর কাজসমূহ, তাঁর ইবাদাত, তাঁর হুকুম-আহকামে তাঁকে এক ও অদ্বিতীয় হিসেবে অন্তরে, কথায় ও কাজে মেনে নিচ্ছি।
- এখন ‘লা ইলাহা’ – অর্থ কি?
- কি (বস্তু কিংবা মতবাদ) এবং কারা সেই মিথ্যা ইলাহ - এটা না জানলে কি এসব মিথ্যা ইলাহকে অস্বীকার করা যাবে?
- এই মিথ্যা ইলাহদেরকে কিভাবে অস্বীকার করতে হবে?
- শুধু মুখের মাধ্যমে অস্বীকার করাই কি যথেষ্ট?
- সবগুলি মিথ্যা ইলাহকে অস্বীকার করে, শুধুমাত্র যে কোন একটি মিথ্যা ইলাহকে অস্বীকার না করলে, পরিত্যাগ না করলে কি মুসলিম হওয়া যাবে?
এই ব্যাপারগুলি প্রথমেই আমাদেরকে জানতে হবে।
- আবার ‘ইল্লাল্লাহ’ – অর্থ কি?
- আল্লাহ কোন কোন ক্ষেত্রে এক ও অদ্বিতীয়?
- রব হিসেবে আল্লাহর কাজ, যেগুলিতে তিনি এক ও অদ্বিতীয় যেমনঃ সৃস্টি করা, রিযিক দান, বিপদ থেকে উদ্ধার করা, আইন-প্রণয়ণ, বিচার-ফায়সালা, মৃত্যু দান ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাস্তব জীবনে কিভাবে আল্লাহর একত্ববাদ বজায় রাখতে হয়?
- বাস্তব জীবনে মানুষ কিভাবে আল্লাহর কাজ, তাঁর নাম ও গুনাবলীতে, তাঁর ইবাদাতে একত্ববাদ বিরোধী কাজ করছে বা শিরক করছে?
- ইবাদাতের ক্ষেত্রে কিভাবে আল্লাহকে এক ও অদ্বিতীয় মানতে হয়?
- ‘ইবাদাত’ কাকে বলে? শুধু কি সালাত- সিয়াম এগুলিই ইবাদাত?
এই ব্যাপারগুলিও আমাদেরকে প্রথমে জানতে হবে।
- ‘মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ’ – বলতে কি বুঝায়?
- রসুল কাকে বলে? রসুলের দায়িত্ব কি ছিলো?
- তিনি কি কিছু জ্ঞান প্রকাশ্য জানিয়ে, বাকীটুকু গোপন রাখতে পারেন?
- অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, রাস্ট্রীয় আইনের ক্ষেত্রে, বিচার-ফায়সালার ক্ষেত্রে রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিখানো আইন-নিয়ম-শিক্ষা থেকে অন্য কোন মহাপুরুষ-বুদ্ধিজীবি-দার্শনিকের যেমনঃ এরিস্টেটল-প্লেটো-মাও সেতুং- লেলিন-স্টেলিন-আব্রাহাম লিংকন কিংবা এ জাতীয় আরো অনেকের শিখানো আইন-নিয়ম-শিক্ষাকে উত্তম মনে করলে, সেগুলির প্রচার-প্রসার করলে, সেগুলি দিয়ে নিজ দেশ-সমাজকে পরিচালিত করতে চাইলে কি নবীকে উত্তম আদর্শ মানা হয়?
- সে ক্ষেত্রে কি মুসলিম থাকা যায়?
- ইবাদাতের ক্ষেত্রে নাবীর সুন্নাতের বাইরে গিয়ে বিদয়াতে লিপ্ত হলে কিভাবে সেটা স্ববিরোধিতা হয়?
এই ব্যাপারগুলিও আমাদেরকে জানতে হবে।
ইসলামের ২য় স্তম্ভ সালাতের যেভাবে কিছু পূর্বশর্ত আছে, যেগুলির যেকোন একটি পালন না করলেও সালাত আদায় হয়না, যেমনঃ ওযু করা কিংবা শরীর পবিত্র থাকা; সেভাবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর কোন পূর্বশর্ত কি আছে? সেগুলি কি কি?
ঠিক যেভাবে কোন কোন কাজ করলে ওযু নষ্ট হয়, সালাত নষ্ট হয়, পুনরায় নতুনভাবে ওযু করতে হয়, সালাত আদায় করতে হয়; সেভাবে কি কি কাজ করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যায়?
- ঈমান নষ্টকারী কাজের মধ্যে বড় শিরক, বড় কুফর, বড় নিফাকী কি কি কাজে হয়?
- কিভাবে আমাদের সমাজে মানুষ না জেনেই এসব কাজে জড়িত হচ্ছে?
- এছাড়া ‘রিদ্দা’ বা দ্বীন থেকে বের হয়ে যাওয়ার কারণসমূহ আমাদেরকে জানতে হবে – যাতে আমরা ইসলাম গ্রহন করার পর আবার কাফির-মুরতাদে পরিণত না হই।
এই ব্যাপারগুলি সবই সর্বপ্রথম জানার বিষয়। কারণ শিরকে লিপ্ত থাকলে অন্য কোন ইবাদাত কবুল হয় না। বড় কুফরে লিপ্ত থাকলে তো মুসলিমই থাকা যাচ্ছে না।
এ রকম যেসব ইলমের উপর নির্ভর করে আমাদের মুসলিম থাকা কিংবা না থাকা – এসব জ্ঞান হচ্ছে সবচেয়ে মৌলিক জ্ঞান। এই ব্যাপারগুলি আমাদেরকে সবচেয়ে আগে, সবচেয়ে গুরুত্ব সহকারে, সবচেয়ে বেশী সময় নিয়ে অধ্যয়ন করা উচিত, আলিমদের কাছ থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জেনে নেয়া উচিত।
এখন কোন আলিম সারা-জীবনে কখনো এসব মৌলিক ব্যাপারে আলোচনা না করে থাকলে, তাকে জিজ্ঞেস করা উচিৎ - কেন তিনি আমাদেরকে এসব গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান থেকে এতদিন দূরে রেখেছেন? আমাদেরকে এসব বিষয় না জানিয়ে আমাদেরকে বিপদ-সীমায় ফেলে রেখেছেন?
২) সাময়িক সময়ের জন্যও জাহান্নামে যাওয়া থেকে বাঁচতে হলেঃ
আমাদেরকে উপরে উল্লেখিত বিষয়সমূহ বাস্তবায়ন করার পর -
(ক) অন্যান্য সকল হারাম এবং কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। যেমনঃ সুদ দেয়া, নেয়া, সুদের লেখক হওয়া বা সাক্ষী হওয়া ইত্যাদি।
- এখন এ রকম কবিরা গুনাহগুলো কি কি? - তা আমাদেরকে জানতে হবে?
- বাস্তবে কিভাবে মানুষ এসব গুনাহে লিপ্ত হচ্ছে? – তা জানতে হবে। যেমনঃ সুদের ক্ষেত্রে সুদ ভিত্তিক লোন নেয়া, লোন দেয়া, ফিক্সড ডিপোজিট রাখা, সুদ ভিত্তিক ব্যাংকে চাকুরী করা ইত্যাদি ব্যাপার সমূহ।
(খ) সকল ফরজ-ওয়াজিব সমূহ পালন করতে হবে। তাই কি কি কাজ একজন মুসলিমের উপর ব্যক্তিগতভাবে ফরজ আর কি কি কাজ সামষ্টিকভাবে ফরজ, তা জানতে হবে। যেমনঃ ইলম অর্জন, সালাত প্রতিষ্ঠা, যাকাত প্রদান, সিয়াম সাধনা, দাওয়াত, সৎ কাজের আদেশ-অসৎ কাজে নিষেধ, জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ কিংবা পারিবারিক-সামাজিক যে সব দায়িত্ব আমাদের উপর ফরজ ইত্যাদি।
৩) জান্নাতের উচ্চতর স্তরে যেতে হলেঃ
উপরে উল্লেখিত উভয় বিষয়সমূহ বাস্তবায়ন করার পর -
আমাদেরকে অন্যান্য নফল ইবাদাত সমূহ যেমনঃ আল-কুরআন তিলাওয়াত, জিকির, নফল সিয়াম, নফল সালাতসমূহ আদায়, দান-সদকা ইত্যাদি ব্যাপারে অনেক বেশী মনযোগী হতে হবে।
বাস্তবে দেখা যায়, আমরা সবাই “সাময়িক সময়ের জন্যও জাহান্নামে না যাওয়া” এবং “জান্নাতের উচ্চতর স্তরে যাওয়ার” জন্য প্রয়োজনীয় ইলম নিয়ে মহাব্যস্ত কিন্তু “চিরস্থায়ী জাহান্নামী হওয়া থেকে বাঁচার ইলম” নিয়ে কোন চিন্তা নেই!!!
পুরো ব্যাপারটি সাধারণ মুসলিমদের জন্য নিছক বোকামী ও দূরদর্শীতার অভাব আর কোন কোন আলিমের অজ্ঞতা, কারো কারো ইমামতি হারানোর ভয়, কারো সত্য গোপন করা এবং আরো অনেকের দুনিয়ার সম্পদের লোভ - ছাড়া আর কিছু না!!!
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার অনুযায়ী ইলম অর্জন করার তৌফিক দান করুন।

Saturday 12 September 2015

পা ছুঁয়ে সালাম করা যাবে?


সাবধান ! মুসলমানদের মাঝে হিন্দুদের আকীদা ও আমল ঢুকে গেছে !!
প্রশ্নঃ পা ছুঁয়ে সালাম করা যাবে? বিয়ের পরে অনেক শ্বশুর-শাশুরি বাধ্য করে পা ছুঁয়ে সালাম করার জন্য, কি করবো?
উত্তরঃ পা ছুঁয়ে সালাম করা, কদমবুসি করা বা পায়ে চুমু খাওয়া, পদধূলি নেওয়া - এ সবগুলো হচ্ছে মুশরেক জাতি হিন্দুদের অনুকরণে নিকৃষ্ট বিদআ’ত। মূলত কবর মাযার পূজারী আর পীর পূজারীরা মুসলমানদের মাঝে এই কুপ্রথা ঢুকিয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, এই বেদাতীরা কবর মাযার ও তাদের পীর বুজুর্গদেরকে সেজদাহ পর্যন্ত করে (নাউযুবিল্লাহ), সুতরাং পা ছুঁয়ে সালাম করা এদের কাছে কোন ব্যপারই না।
আফসোস ! আজ পর্যন্ত কোনো হিন্দু বা কাফেরকে দেখলামনা মুসলমানদের কোনো কিছু অনুকরণ করতে। মুসলমান জাতি কেনো হিন্দুয়ানি কালচার ফলো করার জন্য এতো দিওয়ানা হবে?
বিঃ দ্রঃ পা ছুঁয়ে সালাম করতে গেলে মাথা কোনো মানুষের সামনে ঝুঁকানো হয়, যা শিরক। মুসলমানদের মাথা শুধুমাত্র এক আল্লাহর সামনেই নত হয় - নামাযের রুকু ও সিজদাতে, অন্য কারো জন্য না।
সমস্যা হচ্ছে, সমাজের অজ্ঞ লোকদেরকে নিয়ে – জানেনা ইসলাম একফোটা, ক্বুরান হাদীস না জেনেই বড় বড় ফতোয়া ছাড়ে আর নিরিহ বউদেরকে বাধ্য করে এই হারাম কাজ করার জন্য। দেবদাস মার্কা স্বামী খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে থাকে – তার বউকে হারাম কাজে বাধ্য করা হচ্ছে, বাঁধা না দিয়ে বোবা শয়তান সেজে বসে থাকে। মোস্ট প্রবাবলি, এই ধরণের লোকগুলো মানুষকে খুশি করার জন্য নিজেও শ্বশুড়বাড়ি গিয়ে পায়ের ধূলা নেওয়ার জন্য অন্যের পায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এদেরকে ইসলাম শেখানো জরুরী, এদের মূর্খতার কারণে পুরো সমাজে বিপর্যয় দেখা যাচ্ছে, নিজে ইসলাম জানেনা – অন্যদের ইসলাম পালনে বাঁধা সৃষ্টি করে। সমাজের লোকেরা পাপ কাজে লিপ্ত থাকলে যদি আযাব আসে, সেটা কিন্তু ভালো-মন্দ সবাইকে স্পর্শ করে। তাই আমাদের মুসলমানদেরকে জমীন থেকে শিরক ও বেদাত উৎখাত করার জন্য ক্বুরান ও সুন্নাতের দাওয়াত ও তাবলীগে আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে।
যেই প্রসংগে কথাগুলো বলাঃ
শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি আশা করলেই যে সব আশা পূরণ করতে হবে এমন না, হারাম কাজে তাদের কেন, স্বামীর আদেশও মান্য করা যাবেনা। ইসলামের বিধান হচ্ছেঃ জায়েজ কাজে স্বামীর আনুগত্য করতে হবে, যদিও সেটা কোনো স্ত্রীর ভালো না লাগে বা সে ঐ বিষয়ের সাথে একমত না হয়।
কিন্তু, স্বামী যদি এমন কোনো কথা বলে, যা কুরআন ও সুন্নাহর বিপরীত তাহলে সেটা মানা যাবেনা। আজকাল অনেক মুসলিম(!) পুরুষ তার স্ত্রী পর্দা করুক পছন্দ করেনা, এই ব্যাপারে স্বামীর অনুগত্য করা চলবেনা। এ প্রসংগে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“খালিক (সৃষ্টিকর্তার) অবাধ্য হয়ে কোনো মাখলুকের (সৃষ্টির) আনুগত্য নেই।”
মুসনাদে আহমাদ ও হাকিম।
আর কেউ যদি মানুষকে খুশি করার জন্য আল্লাহর আদেশ অমান্য করে তাহলে তার পরিণতি সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“যে ব্যক্তি মানুষকে সন্তুষ্ট করার আল্লাহ তাআ’লাকে অসন্তুষ্ট করে, তাহলে আল্লাহ তাআ’লা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন। পরিণতিতে আল্লাহ তাআ’লাকে অসন্তুষ্ট করিয়া যাদেরকে সে সন্তুষ্ট করিয়াছিল, তারাও অসন্তুষ্ট হয়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে মানুষকে অসন্তুষ্ট করে, আল্লাহ তাআ’লা তার প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং আল্লাহ তাআ’লাকে সন্তুষ্ট করার জন্যে যাহাদেরকে সে অসন্তুষ্ট করেছিলো, তাদেরকেও আল্লাহ তাআ’লা সন্তুষ্ট করেন। সেই সব অসন্তুষ্ট লোকদের দৃষ্টিতে আল্লাহ তাআ’লা তাকে উত্তম করে দেন, সেই ব্যাক্তির কথা ও কাজকে তাহাদের দৃষ্টিতে শোভণীয় করে দেন।” [সুনানে আত-তিরমিযী]

Sunday 6 September 2015

দাড়ি রাখা সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দূর করুনঃ-

দাড়ি রাখা সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দূর করুনঃ-
আমাদের দেশে দাড়ি রাখা সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে, সেটা হল ''দাড়ি রাখা সুন্নত; অতএব দাড়ি রাখলে ভাল আর না রাখলেতেমন কোন সমস্যা নেই, একটা সুন্নত পালন করা হল না এই আর কি।'' জেনে রাখুন, এটা সম্পূর্ণ একটা ভুল ধারণা।
দাড়ি রাখা কোন অর্থে সুন্নত আর কোন অর্থে ফরয বা ওয়াজিব আগে সেটা বুঝার চেষ্টা করুন। ইসলামে শরীয়তের বিধানের প্রধান সুত্র হচ্ছে কুরআন ও রাসুল (সাঃ) এর সহীহ সুন্নাহ অর্থাৎ সহীহ হাদিস। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্‌পাক যেসকল বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন ও নিষেধ করেছেন তা পালন করা আমাদের জন্য ফরয। আশা করি বিষয়টি সকলের কাছেই পরিষ্কার অর্থাৎ বুঝতে কষ্ট হবার কথা নয়।
এবার আসুন, দাড়ি রাখা কোন অর্থে সুন্নত আর কোন অর্থে ফরয বা ওয়াজিব সেটা জানার ও বুঝার চেষ্টা করি।
আল্লাহ্‌পাক পবিত্র কুরআনে বহু আয়াতে রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশ মেনে চলার জন্য আমাদের বলেছেন। তাঁর মানে হল, রাসুল (সাঃ) যে সকল বিষয়ে আমাদের আদেশ ও নিষেধ করেছেন তা মেনে চলাও আমাদের জন্য ফরয/ওয়াজিব । কুরআনের আয়াতগুলো এখানে দেয়া হল -
রাসূলের আহবানকে তোমরা তোমাদের একে অপরকে আহ্বানের মত গণ্য করো না। আল্লাহ তাদেরকে জানেন, যারা তোমাদের মধ্যে চুপিসারে সরে পড়ে। অতএব যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদেরকে স্পর্শ করবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে। [আন-নুরঃ ৬৩]
আর তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ ও রাসূলের, যাতে তোমাদের উপর রহমত করা হয়। [আল-ইমরানঃ ১৩২]
যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে [মুহাম্মদ সঃ] অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহও তোমাদিগকে ভালবাসেন [আল ইমরানঃ ৩১]
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ মান্য কর এবং শোনার পর তা থেকে বিমুখ হয়ো না। [আল-আনফালঃ ২০]
আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট তায় পতিত হয়। [সূরা আল আহজাবঃ ৩৬]
বলুনঃ আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রসূলের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তার উপর ন্যস্ত দায়িত্বের জন্যে সে দায়ী এবং তোমাদের উপর ন্যস্ত দায়িত্বের জন্যে তোমরা দায়ী। তোমরা যদি তাঁর আনুগত্য কর, তবে সৎ পথ পাবে। রসূলের দায়িত্ব তো কেবল সুস্পষ্টরূপে পৌছে দেয়া। [আন-নুরঃ ৫৪]
রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। [আল-হাশরঃ ৭]
দাড়ি রাখার জন্য রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশ -
ইবনে ওমর (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের বিপরীত করবেঃ দাড়ি লম্বা রাখবে, গোঁফ ছোট করবে । (বুখারী শরীফ, নবম খণ্ড, হাদিস নং - ৫৪৭২ ইফা)
তাহলে বুঝা গেল যে, শরীয়তের বিধানের দ্বিতীয় সুত্র যেহেতু সহীহ হাদিস কাজেই সেই অর্থে দাড়ি রাখা সুন্নত। আর পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্‌পাক রাসুল (সাঃ) এর আদেশ ও নিষেধ মেনে চলার জন্য সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন কাজেই সেই অর্থে রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশ মেনে চলা আমাদের জন্য ফরয। আরও একটি বিষয় সরন রাখা প্রয়োজন যে, রাসুল (সাঃ) জিবরাঈল (আঃ) এর মাধ্যমে প্রাপ্ত আল্লাহ্‌পাকের নির্দেশ ব্যতিত কোন কথা বা কাজের নির্দেশ বা নিষেধ করতেন না। আল্লাহ্‌পাক ভাল জানেন।
দাড়ি রাখা সম্পর্কে উলামাগনের কেউ বলেছেন যে, দাড়ি রাখা ফরজ। কারন রাসূল (সা) আল্লাহ্‌ তা'আলার নির্দেশ ব্যতিত কোন কথা বলতেন না আর তাই দাড়ি রাখার ব্যাপারে রাসূল (সা) এর নির্দেশ মানে আল্লাহ্‌ তা'আলারই নির্দেশ। আবার কেউ বলেছেন যে, দাড়ি রাখা ওয়াজিব আবার কেউ বলেছেন সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। আল্লাহ্‌ তা'আলা ভাল জানেন।
আশা করি, এবার সকলের দাড়ি রাখার বিষয়ে আর কোন সন্দেহ থাকবে না। আল্লাহ্‌পাক আমাদের সকলকে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ মেনে জীবন চলার তৌফিক দান করুন। আমীন।
কোরআন শরীফে সরাসরি দাড়ি রাখার কথা বলা হয়নি তবে হারুন আঃ এর ঘটনায় দাড়ির কথা উল্লেখ রয়েছে ।পবিত্র কুরআনে দাড়ি সম্পর্কে একটি আয়াত আছে- মুসা (আঃ) তাঁর কওমের নিকট ফিরে এসে যখন দেখলেন তাঁর কওম গোমরা হয়ে গেছে, তখন তিনি হারুন (আঃ) কে প্রশ্ন করলেন এবং হারুন (আঃ) জবাবে বলেনঃ
“হে আমার মায়ের ছেলে! আমার দাড়ি ধরো না এবং আমার মাথার চুলও টেনো না” [ত্বোয়া-হা, আয়াত ৯৪]
এখানে বুঝা যাচ্ছে হারুন (আঃ) এর দাড়ি ছিল আর মুসা (আঃ) তার দাড়ি ধরেছিলেন।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়ি রাখার আদেশ করেছেন। এখানে একটি বিষয় জেনে রাখা দরকার, দাড়ির বিধানটি শরীয়তের একটি মৌলিক ও সাধারণ বিধান। একে নিছক আরবীয় রীতি বা বিশেষ স্থান-কালের মধ্যে সীমাবদ্ধ মনে করা মারাত্মক ভ্রান্তি।
সব কিছু আল্লাহ্‌ সুবহা